প্রতিটি যুগেই দেশপ্রেমিক মহান ব্যক্তিরা নিজেদের দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তারা শাসক-শোষকদের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকারের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। এসব সংগ্রামে তাদের নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতেও কোনো বাধা তারা গ্রহণ করেননি।
উদ্দীপকে রাজবন্দিদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হয়েছে। এখানে, জেলখানায় থেকেও কাজী নজরুল ইসলাম অন্যায়ের বিরুদ্ধে কখনো প্রশ্রয় দেননি। তিনি অন্যায়ের প্রতিকার এবং বন্দিদের মুক্তির দাবিতে অনশন ধর্মঘট শুরু করেন।
মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য তার এই অনশন বায়ান্নর দিনগুলি রচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসকগোষ্ঠীর অপশাসন রোধ এবং রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে অনশনের মতোই একটি গভীর সম্পর্ক তৈরি করেছে। উভয় ক্ষেত্রেই সংগ্রামী চেতনার অভিন্নতা প্রতিফলিত হয়েছে।
বায়ান্নর দিনগুলি রচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে উদ্দেশ্যে জেলখানায় অনশনের প্রস্তুতি নেন এবং অনশন শুরু করেন, তেমনই উদ্দেশ্য উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলামের অনশন ধর্মঘটেও প্রতিফলিত হয়েছে। ঢাকা সেন্ট্রাল জেল থেকে ফরিদপুর জেলে পাঠানো হলেও বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন এবং অনশনকে থামানো যায়নি, ঠিক তেমনি উদ্দীপকে কাজী নজরুল ইসলামের অনশনও রোধ করা সম্ভব হয়নি।
এইভাবে, উদ্দীপকে নির্দেশিত দিকটি বায়ান্নর দিনগুলি রচনায় একটি বিশেষ তাৎপর্য লাভ করেছে, তবে এটি রচনার পূর্ণ প্রতিফলন নয়।
বর্ণবাদ, বৈষম্য এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে একসময় দক্ষিণ আফ্রিকার নিপীড়িত কালো মানুষরা ফুঁসে ওঠে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। শাসকগোষ্ঠী এই আন্দোলন দমন করতে শুরু করে নির্মম নির্যাতন। ম্যান্ডেলাকে কারাগারে বন্দি করা হয় এবং তাকে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
কারাগারে তাকে পাথর ভাঙার মতো অমানুষিক পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হয়, যা তার শারীরিক অবস্থাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে এই কঠিন সময়েও কারাগারের পাষাণ হৃদয়ের মানুষদের মাঝে কিছু ভালো মনের মানুষও ছিলেন, যারা তাকে ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং সেবার মাধ্যমে আশার আলো দেখিয়েছিলেন।
অবশেষে দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগের পর নেলসন ম্যান্ডেলা মুক্তি পান। তার এই সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগ বিশ্বের বঞ্চিত মানুষের জন্য স্বাধীনতা এবং ন্যায়ের প্রতীক হয়ে ওঠে।
ক. “বায়ান্নর দিনগুলো” রচনায় বর্ণিত মহিউদ্দিন সাহেব কোন রোগে ভুগছিলেন?
খ. ‘মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে’- লেখক এ কথা বলেছিলেন কেন?
গ. উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে “বায়ান্নর দিনগুলো” রচনায় লেখকের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি তুলে ধর।
ঘ. প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও চেতনাগত ঐক্যই নেলসন ম্যান্ডেলা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একসূত্রে গেঁথেছে- উদ্দীপক ও “বায়ান্নর দিনগুলো” রচনার আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
HSC 2026 Suggestion Group
Answer:
ক. উত্তরঃ প্লুরিসিস রোগে ভুগছিলেন।
খ. উত্তরঃ বিশ্ব ইতিহাসে দেখা যায়, কোনো শাসকই ভাষার দাবিতে আন্দোলনকারীদের হত্যা করেনি। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সেই ভয়াবহ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল, যা তাদের অপরিণামদর্শিতার স্পষ্ট প্রমাণ। এজন্যই লেখক বলেছিলেন, “মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে।”
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন বারবার ঘোষণা করছিল যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, তখন বাঙালিরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। ২১শে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের প্রস্তুতি নিলে শাসকগোষ্ঠী ১৪৪ ধারা জারি করে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করে। কিন্তু বাঙালিরা সেই ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। পুলিশের গুলিতে তখন কয়েকজন আন্দোলনকারী শহীদ হন।
এই হত্যাকাণ্ড আন্দোলনকে আরও তীব্র ও ব্যাপক করে তোলে। সাধারণ জনগণও আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগ দেয়। রাজবন্দিদের মুক্তি এবং বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে স্লোগান ওঠে— “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।”
অবশেষে শাসকগোষ্ঠী বাঙালির আপোসহীন সংগ্রামের মুখে রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে এবং বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। লেখকের বক্তব্য সঠিক প্রমাণিত হয় যে, মানুষ হত্যা ছিল শাসকগোষ্ঠীর একটি ভয়াবহ ভুল, যা তাদের পতনের পথ সুগম করেছিল।
Read more: আঠারো বছর বয়স কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
গ. উত্তরঃ ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র লেখক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাদৃশ্য দেখা যায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বন্দি হন। কারাগারে থাকাকালীন তিনি কিছু মানবিক ও সহানুভূতিশীল মানুষের ভালোবাসা এবং সহযোগিতা লাভ করেন। ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর জেলজীবন এবং মুক্তির স্মৃতি vividly তুলে ধরা হয়েছে। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী তাকে রাজবন্দি হিসেবে বন্দি করে এবং তার আন্দোলন দমন করতে চায়। কারাগারে তিনি অনশন ধর্মঘট শুরু করেন এবং ক্রমশ শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। সেই সময় সিভিল সার্জনসহ কয়েকজন আমলা তার প্রতি সহানুভূতি দেখান এবং অনশন ভাঙাতে বোঝানোর চেষ্টা করেন। অবশেষে দীর্ঘ দুই বছর তিন মাস কারাবাসের পর তিনি মুক্তি পান।
অন্যদিকে, উদ্দীপকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার কারাজীবন বর্ণিত হয়েছে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার কারণে শাসকগোষ্ঠী তাকে দীর্ঘ ২৭ বছর কারাগারে বন্দি করে রাখে। বন্দি অবস্থায় তাকে সীমাহীন শারীরিক পরিশ্রমে বাধ্য করা হয়, যা তাকে অসুস্থ করে তোলে। তবে সেই কঠিন সময়েও কিছু মানবিক ও সহানুভূতিশীল মানুষ তার প্রতি ভালোবাসা এবং যত্নশীল আচরণ করেছিলেন।
উভয় ক্ষেত্রেই শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, দীর্ঘ কারাবাস, বন্দিদশায় সহানুভূতিশীল মানুষের ভালোবাসা ও সেবা পাওয়া এবং অবশেষে মুক্তি লাভ—এই বিষয়গুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ এবং নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনের মধ্যে গভীর সাদৃশ্য তৈরি করেছে। এই সাদৃশ্য তাদের সংগ্রামী চেতনা এবং মানবিক মূল্যবোধকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে।
ঘ. উত্তরঃ নেলসন ম্যান্ডেলা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও তাদের সংগ্রামের মাঝে গভীর সাদৃশ্য রয়েছে।
নেলসন ম্যান্ডেলার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ছিল বর্ণবৈষম্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ছিল ভাষার অধিকার। কিন্তু উভয় আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর পাকিস্তানের পূর্ব এবং পশ্চিম অংশ ভৌগোলিক ও ভাষাগতভাবে একে অপরের থেকে পৃথক ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন তীব্র হয়। এই সময় শাসকগোষ্ঠী অনেক রাজনীতিককে কারাগারে পাঠায়। শেখ মুজিবুর রহমানও রাজবন্দি হন এবং প্রায় ২৭-২৮ মাস কারাভোগ করেন।
অন্যদিকে, উদ্দীপকে উল্লেখিত নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবন্দি হন। বন্দি অবস্থায় তাকে দীর্ঘ ২৭ বছর কারাগারে থাকতে হয় এবং তাকে পাথর ভাঙার মতো অমানুষিক পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হয়। তবে সেই কঠিন সময়েও তিনি কিছু ভালো মনের মানুষের সেবা, ভালোবাসা ও মমতা পেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি মুক্তি পান।
যদিও তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন—একজন লড়েছেন বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং অন্যজন ভাষার অধিকারের জন্য—তাদের কর্মকাণ্ড এবং সংগ্রামের পদ্ধতিতে গভীর মিল রয়েছে। উভয়েই শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে আপোসহীন ছিলেন, কারাগারে থেকেও সংগ্রামের চেতনায় অটল ছিলেন এবং কারাগারের ভেতরে ভালো মনের মানুষের সহযোগিতা ও ভালোবাসা পেয়েছিলেন। দীর্ঘ সংগ্রামের পর উভয়েই অবশেষে স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের বিজয় অর্জন করেন।
এইচ এস সি এক্সামের সকল বিষয়ের সাজেশন পেতে উপরের ডাউনলোড বাটন টি তে ক্লিক করো।
0 মন্তব্যসমূহ