বায়ান্নর দিনগুলো সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
তোমরা যদি বায়ান্নর দিনগুলো সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর খুঁজে থাক তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছো। এখানে তোমরা অনেকগুলো সৃজনশীল প্রশ্নের পিডিএফ উত্তর পেয়ে যাবে।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ১
আমি বর্ণমালার অক্ষর হাতে তুলে দেখি, একে একে ছড়িয়ে পড়েছে সারা পৃথিবীতে, সভা-সম্মেলন, জাতিসঙ্ঘের মঞ্চে। কখন যেন হয়ে গেছে বাঙালির পরিচয়, সবখানে আমি ঘোষণা করেছি, ‘এটি আমি, বাঙালি’। কখন যেন বাংলার আকাশ, তীরের নদী হয়ে উঠেছে আমার অস্তিত্ব। আমার পরিচয়—শেখ মুজিব, এই ছয়টি অক্ষর; আর কিছুই নয়। এই ছয়টি অক্ষরকে নিজের মধ্যে ধারণ করে, আমি চলে গেছি পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে।
ক. ফরিদপুর জেলে বসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কয়টি চিঠি লিখেছিলেন?
খ. ‘এদের কথা হলাে মরতে দেবে না। লেখক কোন প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটি বায়ান্নর দিনগুলাে রচনার কোন দিকটিকে নির্দেশ করেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের মূলভাবে বায়ান্নর দিনগুলাে রচনার লেখকের প্রতি মানুষের গভীর ভালােবাসার প্রতিফলন ঘটেছে।”- মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
Answer:
ক. উত্তরঃ ফরিদপুর জেলে বসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চারটি চিঠি লিখেছিলেন।
খ. উত্তরঃ "যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যুর শান্তি-ছায়ায় চিরদিনের জন্য স্থান পেতে পারি।"—এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শারীরিক অবস্থার বর্ণনায় বলা হয়েছিল অনশনের পরিণাম হিসেবে। তিনি তাঁর জেলজীবনের অভিজ্ঞতায় বর্ণনা করেছেন, কিভাবে পাকিস্তানি শাসকদের অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।
শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতন এবং রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে তিনি অনশন ধর্মঘট শুরু করেছিলেন। এই অনশনের ফলে তাঁর শরীরের অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। পাঁচ-ছয় দিন পর তিনি বিছানা থেকে ওঠার শক্তি হারান। এর মধ্যে ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের গুলি করে হত্যা এবং নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের খবর পেয়ে তিনি আরও কষ্টে ভোগেন। সিভিল সার্জন এসে তাঁকে পরীক্ষা করে মুখ কালো করে বের হয়ে যান, যা থেকে তিনি বুঝতে পারেন যে তাঁর মৃত্যু খুব কাছেই। এই ভাবনায় ভেসে তিনি উক্ত কথা বলেন।
গ. উত্তরঃ উদ্দীপকে বায়ান্নর দিনগুলি রচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেলজীবনের চিত্র স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু বহু অন্যায়-নির্যাতন এবং জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, তবে তিনি কখনোই পরাজিত হননি।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে তিনি দেশের মানুষের মুক্তির জন্য অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিজের জীবনও উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলেন তিনি। বায়ান্নর দিনগুলি রচনায় বঙ্গবন্ধুর জেলজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ উঠে এসেছে, যেখানে ১৯৫২ সালে তিনি ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বন্দী ছিলেন। সে সময় তিনি শাসকগোষ্ঠীর অপশাসন এবং রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে অনশন ধর্মঘট শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু তাকে ঢাকা সেন্ট্রাল জেল থেকে ফরিদপুর জেলে স্থানান্তরিত করা হয়, যেখানে তিনি মহিউদ্দিন আহমদের সঙ্গে আমরণ অনশন ধর্মঘট শুরু করেন।
এই দিকটি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে, যেখানে কাজী নজরুল ইসলামের জেলজীবন এবং তাঁর শাসকগোষ্ঠীর অপশাসন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯২৩ সালের ১৪ এপ্রিল, তাকে আলীপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে এক সাধারণ বন্দি হিসেবে হুগলি জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেও তিনি শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন এবং দাবি আদায়ের জন্য অনশন ধর্মঘট শুরু করেন।
এভাবে উদ্দীপকে বায়ান্নর দিনগুলি রচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেলজীবনের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে, যা পাঠকের কাছে আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়া, সৃজনশীল প্রশ্ন সাধারণত কমন প্রশ্নের বাইরে আসে, তাই বায়ান্নর দিনগুলি রচনার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর প্রস্তুতির জন্য মূল বই এবং সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়ে ধারণা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এতে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর আপনি প্রস্তুত থাকতে পারবেন।
ঘ. উত্তরঃ “উদ্দীপকে নির্দেশিত দিকটি বায়ান্নর দিনগুলি রচনায় একটি বিশেষ তাৎপর্য লাভ করেছে।” – এই মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রতিটি যুগেই দেশপ্রেমিক মহান ব্যক্তিরা নিজেদের দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তারা শাসক-শোষকদের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকারের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। এসব সংগ্রামে তাদের নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতেও কোনো বাধা তারা গ্রহণ করেননি।
উদ্দীপকে রাজবন্দিদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হয়েছে। এখানে, জেলখানায় থেকেও কাজী নজরুল ইসলাম অন্যায়ের বিরুদ্ধে কখনো প্রশ্রয় দেননি। তিনি অন্যায়ের প্রতিকার এবং বন্দিদের মুক্তির দাবিতে অনশন ধর্মঘট শুরু করেন।
মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য তার এই অনশন বায়ান্নর দিনগুলি রচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসকগোষ্ঠীর অপশাসন রোধ এবং রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে অনশনের মতোই একটি গভীর সম্পর্ক তৈরি করেছে। উভয় ক্ষেত্রেই সংগ্রামী চেতনার অভিন্নতা প্রতিফলিত হয়েছে।
বায়ান্নর দিনগুলি রচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে উদ্দেশ্যে জেলখানায় অনশনের প্রস্তুতি নেন এবং অনশন শুরু করেন, তেমনই উদ্দেশ্য উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলামের অনশন ধর্মঘটেও প্রতিফলিত হয়েছে। ঢাকা সেন্ট্রাল জেল থেকে ফরিদপুর জেলে পাঠানো হলেও বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন এবং অনশনকে থামানো যায়নি, ঠিক তেমনি উদ্দীপকে কাজী নজরুল ইসলামের অনশনও রোধ করা সম্ভব হয়নি।
এইভাবে, উদ্দীপকে নির্দেশিত দিকটি বায়ান্নর দিনগুলি রচনায় একটি বিশেষ তাৎপর্য লাভ করেছে, তবে এটি রচনার পূর্ণ প্রতিফলন নয়।
আরো পড়ুনঃ ১. রেইনকোর্ট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন
২. মাসি পিসি গল্পের বহুনির্বাচনী
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ২
বর্ণবাদ, বৈষম্য এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে একসময় দক্ষিণ আফ্রিকার নিপীড়িত কালো মানুষরা ফুঁসে ওঠে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। শাসকগোষ্ঠী এই আন্দোলন দমন করতে শুরু করে নির্মম নির্যাতন। ম্যান্ডেলাকে কারাগারে বন্দি করা হয় এবং তাকে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
কারাগারে তাকে পাথর ভাঙার মতো অমানুষিক পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হয়, যা তার শারীরিক অবস্থাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে এই কঠিন সময়েও কারাগারের পাষাণ হৃদয়ের মানুষদের মাঝে কিছু ভালো মনের মানুষও ছিলেন, যারা তাকে ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং সেবার মাধ্যমে আশার আলো দেখিয়েছিলেন।
অবশেষে দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগের পর নেলসন ম্যান্ডেলা মুক্তি পান। তার এই সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগ বিশ্বের বঞ্চিত মানুষের জন্য স্বাধীনতা এবং ন্যায়ের প্রতীক হয়ে ওঠে।
ক. “বায়ান্নর দিনগুলো” রচনায় বর্ণিত মহিউদ্দিন সাহেব কোন রোগে ভুগছিলেন?
খ. ‘মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে’- লেখক এ কথা বলেছিলেন কেন?
গ. উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে “বায়ান্নর দিনগুলো” রচনায় লেখকের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি তুলে ধর।
ঘ. প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও চেতনাগত ঐক্যই নেলসন ম্যান্ডেলা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একসূত্রে গেঁথেছে- উদ্দীপক ও “বায়ান্নর দিনগুলো” রচনার আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
Answer:
ক. উত্তরঃ প্লুরিসিস রোগে ভুগছিলেন।
খ. উত্তরঃ বিশ্ব ইতিহাসে দেখা যায়, কোনো শাসকই ভাষার দাবিতে আন্দোলনকারীদের হত্যা করেনি। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সেই ভয়াবহ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল, যা তাদের অপরিণামদর্শিতার স্পষ্ট প্রমাণ। এজন্যই লেখক বলেছিলেন, “মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে।”
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন বারবার ঘোষণা করছিল যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, তখন বাঙালিরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। ২১শে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের প্রস্তুতি নিলে শাসকগোষ্ঠী ১৪৪ ধারা জারি করে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করে। কিন্তু বাঙালিরা সেই ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। পুলিশের গুলিতে তখন কয়েকজন আন্দোলনকারী শহীদ হন।
এই হত্যাকাণ্ড আন্দোলনকে আরও তীব্র ও ব্যাপক করে তোলে। সাধারণ জনগণও আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগ দেয়। রাজবন্দিদের মুক্তি এবং বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে স্লোগান ওঠে— “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।”
অবশেষে শাসকগোষ্ঠী বাঙালির আপোসহীন সংগ্রামের মুখে রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে এবং বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। লেখকের বক্তব্য সঠিক প্রমাণিত হয় যে, মানুষ হত্যা ছিল শাসকগোষ্ঠীর একটি ভয়াবহ ভুল, যা তাদের পতনের পথ সুগম করেছিল।
Read more: আঠারো বছর বয়স কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
গ. উত্তরঃ ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র লেখক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাদৃশ্য দেখা যায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বন্দি হন। কারাগারে থাকাকালীন তিনি কিছু মানবিক ও সহানুভূতিশীল মানুষের ভালোবাসা এবং সহযোগিতা লাভ করেন। ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর জেলজীবন এবং মুক্তির স্মৃতি vividly তুলে ধরা হয়েছে। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী তাকে রাজবন্দি হিসেবে বন্দি করে এবং তার আন্দোলন দমন করতে চায়। কারাগারে তিনি অনশন ধর্মঘট শুরু করেন এবং ক্রমশ শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। সেই সময় সিভিল সার্জনসহ কয়েকজন আমলা তার প্রতি সহানুভূতি দেখান এবং অনশন ভাঙাতে বোঝানোর চেষ্টা করেন। অবশেষে দীর্ঘ দুই বছর তিন মাস কারাবাসের পর তিনি মুক্তি পান।
অন্যদিকে, উদ্দীপকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার কারাজীবন বর্ণিত হয়েছে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার কারণে শাসকগোষ্ঠী তাকে দীর্ঘ ২৭ বছর কারাগারে বন্দি করে রাখে। বন্দি অবস্থায় তাকে সীমাহীন শারীরিক পরিশ্রমে বাধ্য করা হয়, যা তাকে অসুস্থ করে তোলে। তবে সেই কঠিন সময়েও কিছু মানবিক ও সহানুভূতিশীল মানুষ তার প্রতি ভালোবাসা এবং যত্নশীল আচরণ করেছিলেন।
উভয় ক্ষেত্রেই শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, দীর্ঘ কারাবাস, বন্দিদশায় সহানুভূতিশীল মানুষের ভালোবাসা ও সেবা পাওয়া এবং অবশেষে মুক্তি লাভ—এই বিষয়গুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ এবং নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনের মধ্যে গভীর সাদৃশ্য তৈরি করেছে। এই সাদৃশ্য তাদের সংগ্রামী চেতনা এবং মানবিক মূল্যবোধকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে।
ঘ. উত্তরঃ নেলসন ম্যান্ডেলা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও তাদের সংগ্রামের মাঝে গভীর সাদৃশ্য রয়েছে।
নেলসন ম্যান্ডেলার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ছিল বর্ণবৈষম্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ছিল ভাষার অধিকার। কিন্তু উভয় আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর পাকিস্তানের পূর্ব এবং পশ্চিম অংশ ভৌগোলিক ও ভাষাগতভাবে একে অপরের থেকে পৃথক ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন তীব্র হয়। এই সময় শাসকগোষ্ঠী অনেক রাজনীতিককে কারাগারে পাঠায়। শেখ মুজিবুর রহমানও রাজবন্দি হন এবং প্রায় ২৭-২৮ মাস কারাভোগ করেন।
অন্যদিকে, উদ্দীপকে উল্লেখিত নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবন্দি হন। বন্দি অবস্থায় তাকে দীর্ঘ ২৭ বছর কারাগারে থাকতে হয় এবং তাকে পাথর ভাঙার মতো অমানুষিক পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হয়। তবে সেই কঠিন সময়েও তিনি কিছু ভালো মনের মানুষের সেবা, ভালোবাসা ও মমতা পেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি মুক্তি পান।
যদিও তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন—একজন লড়েছেন বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং অন্যজন ভাষার অধিকারের জন্য—তাদের কর্মকাণ্ড এবং সংগ্রামের পদ্ধতিতে গভীর মিল রয়েছে। উভয়েই শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে আপোসহীন ছিলেন, কারাগারে থেকেও সংগ্রামের চেতনায় অটল ছিলেন এবং কারাগারের ভেতরে ভালো মনের মানুষের সহযোগিতা ও ভালোবাসা পেয়েছিলেন। দীর্ঘ সংগ্রামের পর উভয়েই অবশেষে স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের বিজয় অর্জন করেন।
এইচ এস সি এক্সামের সকল বিষয়ের সাজেশন পেতে উপরের ডাউনলোড বাটন টি তে ক্লিক করো।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৩
আমি হেঁটে চলেছি ইতিহাসের অলিগলিতে, কাঁধে নিয়ে বাংলার ভাষা আন্দোলনের দায়। সেদিন ২১শে ফেব্রুয়ারি, রাজপথ রক্তে রাঙানো, বুক চিরে ছুটে গেছে ভাষার দাবি। আমার চোখে ভাসে রফিক, সালাম, বরকতের মুখ—তাদের ত্যাগেই তো আজ আমরা বাংলায় লিখি, বাংলায় বলি। আমার কলম তাই কাঁদে, আমার কণ্ঠ উঁচু হয়, আমি বলি—“ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে যারা, তাদের ভুলবো না কোনোদিন।”
ক. ভাষা আন্দোলনের পটভূমি কী ছিল? সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
খ. "আমার কলম তাই কাঁদে, আমার কণ্ঠ উঁচু হয়"—এই বাক্যাংশের ভাব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটি "বায়ান্নর দিনগুলো" গ্রন্থের কোন দিকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “তাদের ত্যাগেই তো আজ আমরা বাংলায় লিখি, বাংলায় বলি”—এই বক্তব্যের আলোকে ভাষা আন্দোলনের অবদান বিশ্লেষণ কর।
ক. উত্তর
ভাষা আন্দোলনের পটভূমি গড়ে ওঠে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর। পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হলে, তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। অথচ পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বাংলা ভাষায় কথা বলত। এই অন্যায়ের প্রতিবাদে ছাত্রসমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিবাদে নামে। এই ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরেই ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার শহীদ হন।
খ. উত্তর
এই বাক্যাংশটি ভাষা শহীদদের প্রতি লেখকের গভীর শ্রদ্ধা ও আবেগ প্রকাশ করে।
-
"আমার কলম তাই কাঁদে" অর্থে বোঝানো হয়েছে, লেখক যখন শহীদদের ত্যাগ স্মরণ করেন, তখন তাঁর কলমেও আবেগ ঝরে পড়ে।
-
"আমার কণ্ঠ উঁচু হয়" অর্থে বোঝানো হয়েছে, শহীদদের আত্মত্যাগ লেখককে প্রতিবাদী ও সচেতন করে তোলে।
এই বাক্যে লেখকের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা এবং নিজের দায়বোধের প্রতিফলন ঘটে।
গ. উত্তর
উদ্দীপকটি “বায়ান্নর দিনগুলো” গ্রন্থের আবেগনির্ভর বর্ণনা ও স্মৃতিচারণমূলক দিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ গ্রন্থে লেখক কেবল ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরেননি, বরং তিনি নিজে যে-ভাবনাগুলো অনুভব করেছেন, সেগুলো হৃদয়ের গভীর থেকে আবেগে ও ভালোবাসায় লিখে গেছেন। লেখক ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ, আন্দোলনের ভয়াবহতা, ছাত্রদের সাহসিকতা ও বাঙালির আত্মপরিচয়ের লড়াইয়ের কথা এমনভাবে বলেছেন, যেন পাঠকের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে সেই সময়।
উদ্দীপকেও এই আবেগ ও আত্মসংলগ্নতা স্পষ্ট। লেখক বলেন, “আমার কলম তাই কাঁদে, আমার কণ্ঠ উঁচু হয়”—এই কথাগুলো শুধু সাহিত্যিক নয়, বরং এক গভীর অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। এতে বোঝা যায়, তিনি শহীদদের আত্মত্যাগ শুধু ইতিহাসের পাতায় দেখেন না, বরং নিজের হৃদয়ে ধারণ করেন। তিনি কণ্ঠ উঁচু করে বলতে চান শহীদদের অবদানের কথা, যেন তা ভুলে না যায় আগামী প্রজন্ম।
এই উদ্দীপকের কথাগুলো “বায়ান্নর দিনগুলো” গ্রন্থের মূল বক্তব্য, উদ্দেশ্য ও ভাষার প্রতি লেখকের দায়বদ্ধতার সঙ্গে গভীরভাবে মিল রয়েছে। ফলে বলা যায়, এই অংশটি গ্রন্থের মানসিক অনুভব, আত্মবিশ্লেষণ এবং জাতিস্মৃতি জাগরণের অংশ হিসেবেই পাঠকের সামনে উদ্ভাসিত হয়।
ঘ. উত্তর
এই বক্তব্যে ভাষা শহীদদের ত্যাগের মহত্ব এবং ভাষা আন্দোলনের বহুমাত্রিক গুরুত্ব অত্যন্ত স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল শুধুমাত্র একটি ভাষার জন্য লড়াই নয়; বরং এটি ছিল একটি জাতির অস্তিত্ব, আত্মপরিচয় এবং সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার আন্দোলন।
পাকিস্তান সরকার যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জাতির মাতৃভাষা বাংলা বাদ দিয়ে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন বাঙালির হৃদয়ে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ, বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। ২১ ফেব্রুয়ারির দিন বুকের রক্ত দিয়ে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ অনেকেই বাংলা ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেন।
এই আত্মত্যাগের ফলেই ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য এখানেই শেষ হয়নি। এটি বাঙালি জাতির চেতনাগত জাগরণ শুরু করে দেয়—যেখানে শুধু ভাষা নয়, নিজেদের সংস্কৃতি, অধিকার, ইতিহাস ও পরিচয়ের প্রতি এক নতুন ধরনের সচেতনতা তৈরি হয়।
এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বাঙালির মধ্যে স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়, যা ধীরে ধীরে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়। ভাষা আন্দোলনের যে চেতনা “আমি কে”—এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে সহায়তা করে, তা-ই বাঙালিকে সাহসী ও সংগ্রামী করে তোলে।
সুতরাং, ভাষা আন্দোলন শুধু বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার ইতিহাস নয়, বরং এটি একটি জাতির আত্মদর্শনের ভিত। শহীদদের সেই মহান আত্মত্যাগের ফলেই আজ আমরা গর্বভরে বলতে পারি—আমার ভাষা বাংলা, আমি একজন বাঙালি। তাঁদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই অধিকার আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার।
0 মন্তব্যসমূহ