তাহাজ্জুদ নামাজ একটি বিশেষ নফল নামাজ, যা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ইবাদতের একটি। এই নামাজ রাতের শেষ অংশে পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয়। আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সূচি, ফজিলত, দোয়া, নিয়ম ও আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
তাহাজ্জুদ নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে কোরআন ও হাদীসে। এটি এমন একটি নামাজ যা বান্দা আল্লাহর সঙ্গে নির্জনে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলে।
- এটি নফল নামাজ হলেও অনেক বড় সওয়াবের কাজ
- রাসুল (সা.) নিজে নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন
- তাহাজ্জুদ নামাজ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ডেকে আনে
- আল্লাহ বলেন, “রাতের কিছু অংশে আপনি তাহাজ্জুদ আদায় করুন; এটি আপনার জন্য নফল, হয়তো আপনার রব আপনাকে প্রশংসিত মর্যাদায় উন্নীত করবেন।” (সূরা বনি ইসরাইল: ৭৯)
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সূচি
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় শুরু হয় রাতের মধ্যভাগ থেকে এবং শেষ হয় ফজরের সময়ের আগে পর্যন্ত।
তাহাজ্জুদের সঠিক সময় তিনভাগে ভাগ করা যায়:
- রাতের প্রথম অংশ (ইশার নামাজের পর থেকে রাতের এক-তৃতীয়াংশ)
- রাতের মধ্যভাগ (মধ্যরাত)
- রাতের শেষ তৃতীয়াংশ (সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ সময়)
সর্বোত্তম সময়: রাতের শেষ অংশ (ফজরের সময়ের আগে ১ থেকে ১.৫ ঘণ্টা আগে)
উদাহরণ: যদি ফজরের আজান হয় সকাল ৪:৩০-এ, তাহলে তাহাজ্জুদের উত্তম সময় হবে রাত ৩টা থেকে ৪টা ১৫-এর মধ্যে।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য আপনাকে রাতে ঘুম থেকে উঠে অজু করতে হবে এবং অন্তত ২ রাকাআত নামাজ পড়তে হবে।
তাহাজ্জুদের নিয়ম:
- অজু করে কিবলামুখী হয়ে নামাজের নিয়ত করুন
- ২ রাকাআত করে আপনি ইচ্ছামতো নামাজ পড়তে পারেন (২, ৪, ৬ বা ৮ রাকাআত পর্যন্ত)
- প্রতিটি রাকাআতে আপনি যেকোনো সূরা পাঠ করতে পারেন
- নামাজ শেষে দোয়া ও আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করুন
তাহাজ্জুদ নামাযে কোন সূরা পড়বেন?
আপনি যেকোনো সূরা পড়তে পারেন, তবে নিচের সূরাগুলো বেশি পড়া হয়:
- সূরা ইখলাস
- সূরা ফালাক
- সূরা নাস
- সূরা আল মুজাম্মিল
- সূরা ইয়াসিন (দোয়ার পর তিলাওয়াত হিসেবে)
ছোট সূরার সাথে আপনি দীর্ঘ কেরাতের অভ্যাস করতে চাইলে ধীরে ধীরে বড় সূরা পড়ার চেষ্টা করতে পারেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া
তাহাজ্জুদের সময় আল্লাহ খুব কাছাকাছি থাকেন, তাই যে দোয়া করবেন তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। নিচে একটি দোয়া উল্লেখ করা হলো:
اللّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ المُتَطَهِّرِينَ
উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মাজ আল্নি মিনাত তাওয়াবীন, ওয়াজ আল্নি মিনাল মুতা তাহ্হিরীন"
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে তওবা কারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের দলভুক্ত করুন।
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের ইসলামিক নাম
তাহাজ্জুদ নামাজ ঘুম ছাড়া কি হয়?
হ্যাঁ, ইশার নামাজের পর কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে তাহাজ্জুদ পড়া উত্তম। তবে যদি কেউ না ঘুমিয়েও তাহাজ্জুদ পড়েন, তাহলে সেটিও নফল নামাজ হিসেবে গৃহীত হবে, তবে মূল ফজিলত তখন পাওয়া যাবে না।
অতিরিক্ত টিপস
- তাহাজ্জুদের জন্য অ্যালার্ম সেট করে ঘুমাতে যান
- ২ রাকাআত নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করুন
- ফজরের আগে ইস্তেগফার ও দোয়া করুন—এ সময় দোয়া বেশি কবুল হয়
উপসংহার
তাহাজ্জুদ নামাজ এমন একটি ইবাদত যা আপনার রুহানিয়াত ও আত্মিক শান্তি বৃদ্ধি করে। আল্লাহর কাছাকাছি যেতে চাইলে তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনি যত বেশি গভীর রাতের ইবাদতে মন দিবেন, তত বেশি রহমত আপনি পাবেন ইনশাআল্লাহ।
সাধারন কিছু প্রশ্ন (FAQ)
১. তাহাজ্জুদ নামাজ কয় রাকাআত?
সর্বনিম্ন ২ রাকাআত, সাধারণত ৮ রাকাআত বা ১২ রাকাআত পড়া হয়।
২. কি সূরা পড়া উত্তম তাহাজ্জুদের সময়?
যেকোনো সূরা, তবে ইখলাস, ফালাক, নাস, মুজাম্মিল ও ইয়াসিন সূরা বেশি পড়া হয়।
৩. কি দোয়া করলে ভালো হয়?
নিজের গুনাহ মাফ, রিজিক, শান্তি, রোগমুক্তি ও জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার দোয়া করতে পারেন।
৪. নারীরা কি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারে?
অবশ্যই। ঘরের মধ্যে ও পবিত্র অবস্থায় তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা নারীদের জন্য অনুমোদিত।
0 মন্তব্যসমূহ