২০ পয়েন্টের স্বদেশ প্রেম রচনা

স্বদেশ প্রেম রচনা  

স্বদেশ প্রেম রচনা

ভূমিকা: 

প্রতিটি মানুষ জন্মভূমির প্রতি এক গভীর ভালোবাসা অনুভব করে। নিজের দেশের আলো, বাতাস, মাটি, পশুপাখি, প্রকৃতি—সবকিছুর সঙ্গেই তার অটুট সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জন্মভূমির প্রতিটি ধূলিকণা তার কাছে অমূল্য মনে হয়। কবির ভাষায়:

"মিছা মণি-মুক্তা হেম স্বদেশের প্রিয় প্রেম তার চেয়ে রত্ন নাই আর।"

বড় অর্থে আমরা সবাই পৃথিবীর সন্তান। কিন্তু যে জায়গায় আমরা জন্মেছি, বেড়ে উঠেছি, সেটিই আমাদের স্বদেশ।

স্বদেশপ্রেম কী: 

স্বদেশপ্রেম হলো নিজের দেশ, ভাষা, সংস্কৃতি এবং দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ। যেমন সন্তান মায়ের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করে, তেমনি একজন মানুষ তার দেশকে ভালোবাসে। স্বদেশপ্রেম হলো দেশের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করার এক দৃঢ় মনোভাব।

আরো পড়ুনঃ অধ্যাবসায় রচনা

স্বদেশপ্রেমের উৎস: 

নিজের প্রতি ভালোবাসা থেকেই স্বদেশপ্রেমের শুরু হয়। যেমন পশু তার বনভূমি, পাখি তার নীড়ের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে, তেমনি মানুষ তার দেশের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করে। জন্মভূমির মাটি, জল, বাতাস, প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। এই সম্পর্ক থেকেই স্বদেশপ্রেমের জন্ম হয়।

স্বদেশপ্রেমের বৈশিষ্ট্য: 

স্বদেশপ্রেম নিছক আবেগ নয়; এটি দায়িত্ববোধের বিষয়। মানুষ অন্য প্রাণীদের থেকে আলাদা কারণ তার মধ্যে ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির চেতনা রয়েছে। তাই দেশের প্রতি মমত্ববোধের সঙ্গে শ্রদ্ধা ও গর্ববোধও মিশে থাকে। কবির ভাষায়:

"স্বদেশের প্রেম যত সেই মাত্র অবগত বিদেশেতে অধিবাস যার।"

স্বদেশপ্রেমের অভিব্যক্তি: 

স্বদেশপ্রেমের সঠিক প্রকাশ ঘটে দেশের দুর্দিনে। যখন দেশ সংকটে পড়ে, তখন একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক নিজেকে উৎসর্গ করতে পিছপা হয় না। এমনকি বিদেশ-বিভুঁইয়ে থাকলেও মানুষের হৃদয়ে স্বদেশপ্রেম জেগে ওঠে।


স্বদেশপ্রেমের প্রভাব: 

স্বদেশপ্রেম মানুষের চরিত্রকে সুন্দর করে তোলে। এটি সংকীর্ণতা ও স্বার্থপরতাকে দূর করে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার প্রেরণা দেয়। একজন দেশপ্রেমিক ব্যক্তি দেশের সুনাগরিক হয়ে ওঠে।

স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ: 

স্বদেশপ্রেম মানে কেবল আবেগ নয়, এটি কাজের মাধ্যমেও প্রকাশ পায়। মা, মাটি ও মানুষের সেবা করার মধ্যেই স্বদেশপ্রেমের প্রকৃত রূপ ধরা দেয়।

স্বদেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ: 

স্বদেশপ্রেম সবসময় স্বার্থহীন এবং খাঁটি হয়। একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক সবসময় দেশের কল্যাণ নিয়ে ভাবে। এডুইন আর্নল্ড বলেছেন:

"জীবনকে ভালোবাসি সত্য, কিন্তু দেশের চেয়ে বেশি নয়।"

SSC suggestion Download

দেশপ্রেমের উগ্রতা: 

দেশপ্রেম মহৎ একটি গুণ, কিন্তু এটি যদি উগ্রতায় পরিণত হয়, তখন তা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। ইতিহাসে হিটলারের উগ্র দেশপ্রেমের ভয়াবহ পরিণতি আমরা দেখেছি। তাই দেশপ্রেম হতে হবে সুস্থ ও দায়িত্বপূর্ণ।

স্বদেশপ্রেমের অনুভূতি: 

দেশপ্রেমের অনুভূতি সবচেয়ে গভীরভাবে প্রকাশ পায় যখন দেশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়ে। তখন মানুষ নিজের জীবন উৎসর্গ করতেও প্রস্তুত থাকে।

ছাত্রজীবনে স্বদেশপ্রেম: 

ছাত্রজীবনই স্বদেশপ্রেম গড়ে তোলার উপযুক্ত সময়। একজন শিক্ষার্থী যদি ছোটবেলা থেকেই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়, তাহলে সে দেশের জন্য বড় অবদান রাখতে পারে।

বাঙালির স্বদেশপ্রেম: 

বাংলার মাটি দেশপ্রেমিকদের রক্তে সিক্ত। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ—সব ক্ষেত্রেই বাঙালির দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে।

জেনে নিন আর্টস এর সাব্জেক্ট কোন গুলো

স্বদেশপ্রেম শিক্ষা: 

স্বদেশপ্রেমের শিক্ষা পরিবার, বিদ্যালয় এবং সমাজ থেকে অর্জিত হয়। দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে হবে এবং দেশের জন্য কাজ করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।

স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত: 

বিশ্বের অনেক মনীষী নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে স্বদেশপ্রেমের উদাহরণ স্থাপন করেছেন। বাংলার শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহাত্মা গান্ধী—এঁরা সবাই স্বদেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

স্বদেশপ্রেমের বিকাশ: 

মা আমাদের প্রথম আশ্রয়, মাতৃভাষা আমাদের চিন্তা ও অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম, আর মাতৃভূমি আমাদের পরিচয় ও অস্তিত্বের ভিত্তি। একজন মানুষের মধ্যে স্বদেশপ্রেমের বীজ বপন হয় এই তিনের প্রতি গভীর মমত্ববোধ থেকে। 

HSC suggestion Download

মায়ের স্নেহ, মাতৃভাষার মাধুর্য এবং মাতৃভূমির মাটি ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা মিলে গড়ে ওঠে এক অটুট বন্ধন, যা মানুষকে দেশের জন্য আত্মত্যাগে অনুপ্রাণিত করে। এ ভালোবাসা জাতীয় ঐক্য, শান্তি এবং অগ্রগতির পথে মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাই, মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা স্বদেশপ্রেমের ভিত্তি।

স্বদেশপ্রেমের উপায়: 

দেশপ্রেম মানে শুধুমাত্র মুখে দেশকে ভালোবাসা বা স্লোগান দেওয়া নয়, বরং এটি প্রতিদিনের কাজকর্মে প্রতিফলিত হওয়া উচিত। প্রকৃত দেশপ্রেম হচ্ছে নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা, আইন মেনে চলা, এবং দেশের উন্নতির জন্য কার্যকরী অবদান রাখা। দুর্নীতি থেকে দূরে থাকা, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা এবং অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া দেশপ্রেমের মূল ভিত্তি। আমাদের কাজের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার। দেশের কল্যাণে কাজ করলে তা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়, জাতির সমৃদ্ধির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই, দেশের প্রতি ভালবাসা শুধু কথায় নয়, কাজে প্রদর্শন করা উচিত।

সাহিত্যে দেশপ্রেম: 

বাংলা সাহিত্যে দেশপ্রেম একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অমর বিষয় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ অনেক কবি ও সাহিত্যিক তাঁদের রচনায় দেশপ্রেমের গভীর চেতনা প্রকাশ করেছেন। রবীন্দ্রনাথের “আমার সোনার বাংলা” গানটি দেশপ্রেমের এক অনবদ্য নিদর্শন, যেখানে তিনি দেশের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং একাত্মতার কথা বলেছেন। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতার মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং জাতীয় চেতনাকে উদ্ভুদ্ধ করেছেন। এই সাহিত্যের মাধ্যমে দেশপ্রেম জাতির হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপট: 

বর্তমান সময়ে অনেক মানুষ নিজেদের স্বার্থে দেশের উন্নতি এবং দেশের প্রতি দায়িত্ব পালনের কথা ভুলে যাচ্ছে। সমাজে নানা অস্থিরতা, দুর্নীতি এবং স্বার্থপরতা দেখা যাচ্ছে, যা দেশপ্রেমের বিরুদ্ধে যায়। অনেকেই দেশের জন্য কিছু করার পরিবর্তে নিজের লাভ এবং খ্যাতির দিকে নজর দেয়। এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, কারণ দেশপ্রেম মানুষের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। দেশের উন্নতির জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, এবং আমাদের সমাজে দেশপ্রেমের চেতনা ফিরিয়ে আনতে হবে।

উপসংহার: 

স্বদেশপ্রেম একটি মহৎ গুণ। এটি শুধু আবেগ নয়, এটি দায়িত্ব। আমাদের উচিত দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের জন্য কাজ করা। তাহলেই আমাদের দেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ