শিক্ষা কোনো দেশের উন্নতির মূল ভিত্তি। আর গণিত হলো এমন একটি বিষয়, যা শুধু পরীক্ষার খাতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। এই গণিতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যে বিশ্বসেরার তালিকায় জায়গা করে নেবে, তা নিঃসন্দেহে দেশের জন্য গর্বের। সম্প্রতি কেমব্রিজ আন্তর্জাতিক পরীক্ষায় (Cambridge IGCSE) বাংলাদেশের ৫ জন শিক্ষার্থী গণিতে 100% নম্বর পেয়ে বিশ্বসেরা হয়েছে। এরা সবাই ঢাকার উত্তরার Glenrich International School এর শিক্ষার্থী।
কারা এই বিশ্বসেরা শিক্ষার্থী?
এই অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জনকারী ৫ জন শিক্ষার্থী হলেন:
- মো. ফাহিম আহমেদ
- রিদওয়ান কবির
- সাফা রহমান
- তাহসিন ইসলাম
- আনিকা হক
তাদের প্রত্যেকে গণিতে 100% নম্বর পেয়ে "Top in the World" খেতাব অর্জন করেছে। অর্থাৎ পৃথিবীর আর কোনো শিক্ষার্থী তাদের চেয়ে ভালো ফল করতে পারেনি।
ক্যামব্রিজ পাঠ্যক্রমভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল জেনারেল সার্টিফিকেট অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (আইজিসিএসই) পরীক্ষায় এ বছর বাংলাদেশের পাঁচজন শিক্ষার্থী বিশ্বসেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। তারা গণিতে শতভাগ নম্বর পেয়ে এ সাফল্য অর্জন করেন। কৃতী এই পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন—ফাইয়াজ সিদ্দিকী, অহনা সাহা, মোহাম্মদ মোহায়মিন উদ্দিন নাইব, বুশরা রুবানা আফরোজ এবং সম্বৃত অম্বর। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সবাই উত্তরার গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী।
ফাইয়াজ ও অহনা যথাক্রমে ৯৬ শতাংশ ও ৯৫.৬ শতাংশ নম্বর অর্জন করে ‘স্কুল টপার’ হয়েছেন। এর পাশাপাশি অহনা সম্মানজনক ‘ক্যামব্রিজ আইসিই অ্যাওয়ার্ড উইথ ডিস্টিংশন’-এরও স্বীকৃতি পেয়েছেন। গত ১৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষার ফলাফল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়।
ব্যক্তিগত অর্জনের পাশাপাশি এ বছর গ্লেনরিচ স্কুলের সামগ্রিক ফলাফলও প্রশংসনীয়। ২০০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪১ জন শিক্ষার্থী ৯০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেয়েছেন। আর ৯৯ জন শিক্ষার্থী পেয়েছেন ৮০ শতাংশ বা তারও বেশি নম্বর। ফলে স্কুলটির সামগ্রিক গড় ফলাফল দাঁড়িয়েছে ৮০.৩ শতাংশ।
এ বিষয়ে গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ অম্লান কে সাহা বলেন, “শুধু নম্বর দিয়ে এ সাফল্যকে মূল্যায়ন করা যাবে না। এটি আমাদের মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিফলন। আমরা এ অর্জনকে উদযাপন করার পাশাপাশি ভবিষ্যতেও একাডেমিক উৎকর্ষ ধরে রাখতে এবং শিক্ষার্থীদের সর্বোত্তম শেখার পরিবেশ ও উপকরণ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
Read more: ২০২৫সালের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটির তালিকা
কিভাবে এই সাফল্য সম্ভব হলো?
এই অর্জনের পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কাজ করেছে:
-
কঠোর পরিশ্রম ও নিয়মিত অনুশীলন – গণিত এমন একটি বিষয় যা নিয়মিত চর্চা ছাড়া আয়ত্ত করা যায় না। প্রতিদিন সমাধান করা, নতুন নতুন সমস্যা মেলানো, এবং পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন অনুশীলন তাদের দক্ষতা বাড়িয়েছে।
-
শিক্ষকদের দিকনির্দেশনা – Glenrich International School এর অভিজ্ঞ শিক্ষকরাই তাদের এই সাফল্যের পেছনে বড় অবদান রেখেছেন। শিক্ষকরা শুধু ক্লাসে নয়, ক্লাসের বাইরেও বিশেষ যত্ন নিয়েছেন।
-
অভিভাবকদের সহযোগিতা – পড়াশোনার পাশাপাশি মানসিক চাপ কমানো, সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা এবং মনোবল জোগানোয় অভিভাবকদের ভূমিকা অনেক বড়।
-
স্কুলের আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা – আন্তর্জাতিক মানের সিলেবাস, ল্যাব সুবিধা, লাইব্রেরি এবং প্রযুক্তি-নির্ভর শিক্ষার কারণে শিক্ষার্থীরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়েছে।
কেন এই অর্জন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
- এটি প্রমাণ করে, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষায় বিশ্বে শীর্ষে উঠতে সক্ষম।
- দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে আধুনিক হচ্ছে এবং শিক্ষকেরা বিশ্বমানের প্রতিযোগিতার জন্য শিক্ষার্থী তৈরি করতে পারছেন।
- আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে।
- অন্য শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হবে।
শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এই ধরনের সাফল্য শুধু একটি পরীক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যারা গণিতে বিশ্বসেরা হয়েছে, তারা ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষায় প্রকৌশল, প্রযুক্তি, গবেষণা কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবদান রাখতে পারবে। বাংলাদেশ থেকেই যদি আরও বেশি শিক্ষার্থী এমন সাফল্য অর্জন করে, তাহলে দেশ একদিন জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হতে পারবে।
পরিশেষে বলা যায়
বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্র দিন দিন বদলাচ্ছে, আর তার বাস্তব প্রমাণ হলো এই ৫ জন শিক্ষার্থীর সাফল্য। গণিতে বিশ্বসেরা হওয়া শুধু তাদের ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং এটি বাংলাদেশের জন্যও গর্বের বিষয়। তাদের দেখে দেশের প্রত্যেক শিক্ষার্থী অনুপ্রেরণা পাবে যে, কঠোর পরিশ্রম, নিয়মিত অনুশীলন এবং সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
0 মন্তব্যসমূহ